বৃহস্পতিবার, ৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩

"ভূতের মুখে রাম নাম অথবা গিরগিটির কেসিং বদল!!!!!!!"

১৬ই ডিসেম্বর স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে মগবাজার আলফালাহ মিলনায়তনে আয়োজিত এক মাহফিলে প্রখ্যাত আলবদর লিডার, কয়েদ আজম এর চামচা এবং মৌদুদী'র চ্যালা মইত্যা রাজাকার বলেছে-
'জাতির স্থপতি শেখ মুজিব একজন কুশলী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ছিলেন।' এ আমরা কী শুনলাম? এ ও কি সম্ভব!
নিজামী বলেছে-জিন্নাহর দ্বিজাতি তত্ব একটা স্বার্থক থিওরী।
শেখ মুজিব '৭২ এর ১০ই জানুয়ারী দেশে নেমেই বলেছিলেন বাঙলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশ। এ থেকেই নাকি প্রমাণ হয়, জিন্নার থিওরী সঠিক ছিল।
এসব রাজাকারদের শরীর থেকে স্বধীনতার এতো বছর পরও সেই দূর্গন্ধ ছড়াচ্ছে এখনও। পরিবেশটাও দূষিত করছে। '৭৪ এ বাঙলাদেশকে ও আই সি'র সদস্যপদ দেয়ায় এটি নাকি প্রমাণিত হয় যে বাঙলাদেশ ধর্ম নিরপেক্ষ দেশ নয়।
তার মতে, ৩৭ বছর ধরে ভারত বাঙলাদেশের সাথে বিমাতাসুলভ আচরন করেছে এ জন্য যে, তারা চায়নি বাঙলাদেশের জনগন ভাল থাকুক, কারণ বাঙলাদেশ মুসলিম রাষ্ট্র!
ভারতীয় বাহিনী বাঙলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ব্যপক লুটপাট করেছে, যার মধ্যে ছিল-অস্ত্র, কলকারখানার নাটবল্টু, স্কুল কলেজের বিজ্ঞানাগারের যন্ত্রপাতি এমনকি ব্লাড ব্যাংকের রক্ত পর্যন্ত!
যৌবনে শেখ মুজিব, তাজউদ্দীন আহমদ মুসলিম লীগ করতেন এবং জিন্নার তত্ত্ব মেনে নিয়েছিলেন। এ থেকে তাঁদেরকেও নিজামীর মতো জিন্নার চামচা বলে ধরে নেয়া যায়!
মইত্যা রাজাকার আরো বলেছে- শেখ হাসিনার নির্বাচনী ইশতেহারে বর্ণিত-- ক্ষমতায় গেলে হাসিনা কোরান-সুন্নাহ বিরোধী কোন আইন প্রণয়ন করবেনা যার গূঢ়ার্থ হলো, হাসিনাও ধর্ম নিরপেক্ষ নয়।
তবে সমালোচনা করেছে-হাসিনার আরেকটি কথায়, হাসিনা '৭২ এর সংবিধানে ফিরে যাওয়ার ব্যাপারে। ওই সংবিধান ফলো করা আর কোরান-সুন্নাহর বিরোধীতা করা নাকি একই কথা!
তার আরেকটি কথা জনতার হাসির উদ্রেক করেছে-গত দুই বছরে দেশ নাকি ২০ বছর পিছিয়েছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার থিওরী যেহেতু শেখ হাসিনার মাথা থেকে বেরিয়েছে, ফলে এই দুই বছরের ব্যার্থতাও নাকি হাসিনাকেই নিতে হবে!!!

একটা মাথা বটে! তবে রাজাকারীয় মাথা বলে কথা।
শেখ মুজিব যে একজন কুশলী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ছিলেন, তা তার এতোবছর পর উপলব্ধি হলো? '৭১ এ এতো প্যাঁদানি খেয়েও টের পায়নি তারা?
জিন্নার দ্দিজাতি তত্ব তাদের একমাত্র মোটো ছিল, জিন্না ও তাদের অনুসারীদের কথা তাদের একমাত্র পথনির্দেশ ছিল, এসব যদি তাদের এতোই প্রিয় হয়ে থাকে, তবে কেন ওই রাজাকাররা এদেশে পড়ে আছে, পাকিস্থানে থাকলেই পারে। পাকিস্থানে তাদের উপযুক্ত খাতির যত্ন হতো, চর্ব্য চোষ্য পেত। নাকি সেখানেও এইসব আগাছাদের কদর নেই? সেই তত্ব অনুযায়ী তাদের কাছে তো বাঙলাদেশের জন্ম অনাকাঙ্ক্ষিত হবেই। তবে কেন এদেশে তাদের বাস।
স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বাঙলাদেশের প্রয়োজন ছিল স্বীকৃতির, তা যে কোন আন্তর্জাতিক সংগঠনই হোক না কেস, সেই সময় শেখ মুজিব জাতিসংঘে যে জ্বালাময়ী ভাষণ দিয়ে এসেছিলেন বাঙলা ভাষায়, তা ইতিহাসের একটা উজ্জ্বল অধ্যায়। দল-মত নির্বিশেষে সবাই তা সমর্থন করবেন। ও আই সি তে যোগ দেয়ার যে যুক্তি, তা হলো এদেশের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠতা। তার মানে এই নয় যে, বাঙলাদেষ গোঁড়া মুসলিম রাষ্ট্র হয়ে গেছে যোগ দিয়ে।
পৃথিবীর বহু দেশই বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠনের সাথে জড়িত। কেউ পারমাণবিক অস্ত্র তৈরী করে অন্য দেশের সাথে সেই প্রযুক্তি আদান প্রদান করার চুক্তিতে সই করে আবার একই সাথে পারমানবিক নিরস্ত্রীকরণ চুক্তিও করে। এরকম অজস্র উদাহরণ রয়েছ। দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশ হওয়ার মানে এই নয় যে বাঙলাদেশ ধর্ম অনিরপেক্ষ দেশ। ভারতীয় উপমহাদেশে (বাঙলাদেশসহ) বহু ধর্মের মানুষ একসাথে হাজার বছর ধরে পাশাপাশি নির্বিঘ্নে বাস করছে। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগেনি, লাগানো হয়েছে ইংরেজদের কুচক্রে। যদি বাঙলাদেষ ধর্ম নিরপেক্ষ দেশ না হতো, তবে অনেক আগেই এরকম দাঙ্গা লেগে যেত। আর জিন্নার মতো অনেক ন্যাতার উদ্ভব হতো, আরো অনেক দ্বিজাতি-ত্রিজাতি-চৌজাতি তত্ত্ব আবিষ্কৃত হতো। ওইসব আগাছা রাজাকারদের আরো অনেক কয়দ আজম পিতার মুখ দেখত বাঙলাদেশ।
বাঙলাদেশের সাথে ভারতের বিমাতাসুলভ আচরণের মূল কারন নাকি বাঙলাদেশের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠতা! হোয়াট এ লজিক। পৃথিবীর ইতিহাসে বহু ক্ষুদ্র দেশের সাথে বৃহৎ প্রতিবেশী দেশগুলোর আচরণ এরকমই হয়ে থাকে। যার সর্বশেষ উদাহরণ রাশিয়া ও জর্জিয়ার সম্পর্ক। উভয় দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনসাধারণের ধর্ম তো একই। তাহলে রাশিয়ার এই আগ্রাসনের কারন কি? ওদের কাছে জানতে ইচ্ছে করছে।
বাঙলাদেশ একসময় না একসময় পাকিস্থানের আগ্রাসন থেকে মুক্তি ঠিকই পেত, ৯ মাসের জায়গায় হয়তো কিছু সময় বেশি লাগতো, হয়তো বা..। কিন্ত ভারতীয় সামরিক বাহিনীর সহযোগিতায় তা একটু ত্বরাণ্বিত হয়, এটা স্বীকার করতেই হবে। তাদের এসব লুটপাটের ঘটনা আমি এই প্রথম জানলাম, আমাদের কলকারখানার নাটবল্টু, ল্যাবরেটরীর যন্ত্রপাতি, ব্লাড ব্যাঙ্কের রক্ত চুরি করেছে ওরা।
জানতে ইচ্ছা করে-'৭১ এ গো.আযম-নিজামি-সাইদি-সাকাচৌ...রাজাকারদের পিতারা বাঙলাদেশের কোন্ কলকারখানাগুলো অক্ষত রেখেছিলো? ওরাই তো ৮মাস ধরে সবই ধ্বংস করে দেয়, নাট বল্টু সহ। ভারতীয় বাহিনীর লুটপাটের জন্য কিছু বাকি রেখেছিলো ওরা? এত বৃহৎ একটা দেশের সামরিক বাহিনী এ দেশে নাটবল্টু চুরি করতে এসেছিল এটা এদেশের মানুষকে বিশ্বাস করাতে চাইছে ওরা? ব্লাড ব্যাংকের রক্ত চুরি করার কথা বলেছে রাজাকাররা। ভারতের মতো বিরাট এক জনঅধ্যুষিত দেশে বিশুদ্ধ রক্তের এতো আকাল পড়েছিলো যে ওদের বাঙালী "মুসলমানী" রক্তের প্রয়োজন পড়েছিলো, ঠিক না? যদি ওরা গোঁড়া হিন্দু (নিজামির কথায়) হয়ে থাকে, ওরা মুসলিম রক্ত পছন্দ করতো? ভারতে যেসব শরনার্থীরা আশ্রয় নিয়েছিল তাদের জন্য চিকিৎসা উপকরণ, রক্ত সব কে সরবরাহ করেছিল তার উত্তর নিশ্চয়ই নিজামির জানা আছে। ওরা না হয় রক্ত লুট করতে এসেছিল (যদি ধরে নিই),হানাদার ও তাদের এদেশি দোসররা কি করেছিল তখন-গনিমতের মাল হিসেবে নারী, ধন-সম্পদ ইত্যাদি লুট করে সমগ্র বাঙলাদেশকে পঙ্গু করে ফেলেছিল কে?
রাজাকার-আলবদর-আল শামস এবং তৎকালিন ছাত্র সংঘ (বর্তমান শিবির) এবং তাদের জন্মদাতা পিতা পাকিস্থানী হানাদাররা সহ এদেশে কত লাখ মানুষের রক্ত ঝরিয়েছে, আল্লাহু আকবর বলে গলায় ছুরি চালিয়েছে-তার সংখ্যা কয় লাখ তার উত্তর ইতিহাস দেবে। এই বেজন্মাদের মুখে এসব নীতিকথা শোভা পায়না।
সে আরো বলেছে-শেখ মুজিব-তাজউদ্দীন আহমদ প্রমুখ মুসলিম লীগ করতে, যার মানে এই-তারা জিন্নার মতাদর্শে বিশ্বাসী। যদি মতাদর্শী হয়েই থাকে, তবে মুসলিম লীগ ত্যাগ করে আওয়ামী লীগে যোগ দিলেন কেন, তার জবাব কিন্তু রাজাকারবৃন্দ দিতে পারে নি। মতের অমিলই শেখ মুজিব-তাজউদ্দীন কে আওয়ামী লীগে যোগদিতে বাধ্য করেছে। শেখ হাসিনার '৭২ সংবিধানে ফিরে যাওয়ার ব্যাপারে আলবদরকুলশিরোমনি বলেছে- '৭২ সংবিধান নাকি কোরআন সুন্নাহ বিরোধী। আরে, কোরআন নুন্নাহকে তো তারাই ব্যবহার করছে নিজেদের স্বার্থে, তার্‌ই তো সবচে' ঘৃণ্য জানোয়ার।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের গত ২ বছরের ব্যর্থতার দায়ভার হাসিনাকেই নিতে হবে বলে যে হাস্যকর যুক্তি দেখিয়েছে মইত্যা রাজাকার তা তার অসুস্থ মস্তিষ্কের পরিচায়ক। এর কারণ হলো-হাসিনাই তত্ত্বাবধায়ক সরকার থিওরীর প্রণেতা। কি আজব। তবে হ্যাঁ আমি এ যুক্তিটা কিছুটা সাপোর্ট করবো, কারণ তত্ত্ববধায়ক সরকার অন্য কি করেছে তা বাদ দিলাম, তারা ব্যার্থ হয়েছে বাঙলাদেশকে রাজাকারমুক্ত করতে। এর দায়ভার হাসিনার ওপরও বর্তাবে এই কারনে তার ক্ষমতায় থাকাকালীন তিনিও তার বাবার হত্যার বিচার করতে পারে নি, পারেনি রাজাকার-আলবদর-আল শামস বিতাড়ন করতে, তার সাথে ঘা.দা.নি.ক ও ব্যর্থ।
এহেন হাস্যকর ও বিরক্তি উদ্রেককারী কথা তাদের মতো শয়তান ছাড়া আর কার মাথা থেকে বেরোবে! তবে এদের মাথা থেকে এরচে' ভাল আউটপুট জাতিও আশা করেনা।
এখানে আরও অনেক কথা বলার ছিল, বলতে ইচ্ছা করছে। কিন্তু অফিসে বসে এগুলো লেখা মানে কাজে ফাঁকি দেয়া, কিন্তু না লিখেও পারছিলাম না। একটু নাহয় ফাঁকিই দিলাম। তবুও পাঠকদের বলছি, অগোছালো কথাগুলো সাধারণ জনগন সবার মনেই উদ্রেক হতো। আরা এখানে আমি কোন বিশেষ দল/ব্যক্তির পক্ষ নিয়ে কিছু বলছি না, রাজাকারদের স্বাধীনতা দিবস নিয়ে অনুষ্ঠানের আয়োজনের ধৃষ্ঠতা নিয়ে বলতে চেয়েছি। কথায় বলে- চুরিতো চুরি আবার সিনাজুরি। ব্যাপারটা আসলে তা-ই। অনুষ্ঠান আয়োজন করে তারা জনগনকে কি ম্যাসেজ দিতে চায়? তারাও মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের লোক? ইদানিং তাদের মুখে এগুলো বেশি শোনা যাচ্ছে। তাদের ইশতেহারে ক্ষমতায় গেলে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা বাড়ানোর কথাও রয়েছে। ২৬মার্চ, ২১ফেব্রুয়ারী, ১৬ডিসেম্বরসহ জাতীয় দিবসগুলোতে তাদের উপষ্থিতি আমাদেরকে শঙ্কায় ফেলে দিচ্ছে। তাদের উদ্দেশ্য জনগণ বুঝতে পারছে। জনগনকে কি তারা বেকুব ভাবে নাকি!
তাদের ওই পুঁতি গন্ধময় মুখে তাদের পিতৃকুল পাকিস্থানীদের কথা শোভা পেতে পারে, কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ-স্বাধীনতা-বাঙলাদেশ বিষয়ক কোন কিছুই উচ্চারিত হতে পারে না। তারা এখন রং বদলে ফেলেছে, বড় গলায় কথা বলতে শিখে গেছে। এসব আমাদেরই নপুংশকতার পরিচয় দিচ্ছে। তাদের অশুভ ছায়া আবারো বিস্তার করতে চাইছে, সবাই মিলে আসুন তাদের প্রতিহত করি।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন