বৃহস্পতিবার, ৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩

জামাতের মুখপত্র দৈনিক সংগ্রাম-এর ভূমিকা

১৯৭১-এ জামাতের মুখপত্র দৈনিক সংগ্রাম-এর ভূমিকা (পর্ব-৭)
আল ইহসান ডেস্ক:

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে মিডিয়ার একটা ভূমিকা ছিলো। কখনও তা দেশের পক্ষে গেছে আবার কখনও বিপক্ষে। তখন প্রিন্ট মিডিয়াই প্রধান ফ্যাক্টর ছিল। আমাদের দেশীয় পত্রিকার মধ্যে প্রায় সব পত্রিকার সাংবাদিকরাই জীবনবাজি রেখে স্বাধীনতার পক্ষে কলম চালিয়ে ছিলো। কিন্তু মওদুদীবাদী জামাতের মুখপত্র দৈনিক সংগ্রাম নামের পত্রিকাটি মিথ্যা, বানোয়াট এবং পাকিস্তান সরকারের দালালী করে বিভ্রান্তিকর খবর চাপতো। একটি বিদেশী পত্রিকা যদি বিরোধী ভূমিকা নেয়, তবে তা মেনে নেয়া যায়। কিন্তু শতকরা ৯৯ ভাগ জনগণের পক্ষে না গিয়ে কি নির্লজ্জভাবে পাকিস্তান সরকারের দালালী করেছিলো দৈনিক সংগ্রাম। ১৯৭১ সালের এপ্রিল মাসের দৈনিক সংগ্রাম থেকে কিছু উদ্ধৃতি সংক্ষিপ্তাকারে তুলে ধরা হলো-
২০ এপ্রিল :
‘জামাত এবং মুসলিম লীগ আগেই সতর্ক করে আসছিলো’ নামের উপ-সম্পাদকীয়তে উল্লেখিত দলসমূহের আগাম সতর্কবাণী সম্পর্কে একটি হায়! হায়!! লেখা ছাপা হয়।
প্রাক নির্বাচনী সতর্কবাণীর বিবরণ দিতে গিয়ে বলা হয়, ‘জামাত এবং মুসলিম লীগ নির্বাচনের আগেই ভারতের ষড়যন্ত্রের বিষয়ে জনগণকে সতর্ক করে আসছিলো। কিন্তু জনগণ তাতে কান দেয়নি। এখন কেন পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর সামনে এমনভাবে কাতরাচ্ছে? দুশ বছর ব্রিটিশ শাসনে থেকেও জনগণ ভাবতে পারেনি যে, এই পূর্ব পাকিস্তানে শেখ মুজিবের মতো আরো এক মীরজাফরের জন্ম হয়েছে। এই মুহূর্তে পূর্ব পাকিস্তানের উচিত হবে ভারতীয় অনুপ্রবেশকারী এবং দেশীয় দালাল, মীরজাফরদের ধরে ধরে সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দেয়া। আমরা গত পহেলা মার্চ থেকে তাদের জয় বাংলা শ্লোগান শুনতেছি এবং তাদের লুণ্ঠন, অত্যাচার, রাহাজানি স্বচক্ষে দেখতেছি।’
২১ এপ্রিল :
এদিন সম্পাদকীয়তে বেশ জোরালোভাবে বাংলাদেশীদের ধ্বংসের পক্ষে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নিকট আহবান জানানো হয়। ‘প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে সেনাবাহিনীকে ছড়িয়ে দেয়ার সময় এসেছে’ টাইটেলে শক্তভাবে এবং অত্যন্ত প্রয়োজনীয় উল্লেখ করে লেখা হয়- ‘একটি দেশ জন্ম নিতে এবং পরাধীনতা স্বাধীন হতে কয়েকশ বছর লেগে যায়, কিন্তু সে দেশ পরাধীন হতে যেন একদিনও লাগে না। ব্রিটিশরা বিদায় নেয়ার পর এখন নতুন করে ভারতীয়রা চাচ্ছে পূর্ব পাকিস্তানকে দখল করে তাদের দাস বানাতে। কারণ পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ অধিক পরিশ্রমী এবং মেধাবী। আমাদের আছে সুদক্ষ সেনাবাহিনী। তারা এবার ছড়িয়ে পড়–ক পূর্ব পাকিস্তানের প্রত্যন্ত অঞ্চলে, যেখানে তাদেরকে সাহায্য করবে এ প্রদেশের দেশপ্রেমিক জনগণ।’
২২এপ্রিল :
দৈনিক সংগ্রাম এতোদিন প্রচার করে এসেছে দেশে মুক্তিযুদ্ধ বলে কিছু নেই। যা হচ্ছে তা বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা মাত্র। আর তা ঘটাচ্ছে ভারতীয় চর আর দালালেরা। দেশের কোনো নাগরিক কোনো রকম যুদ্ধের সাথে নেই। কিন্তু ২২ এপ্রিল এপিপি থেকে ধার করা একটি সংবাদ প্রথম পাতায় ছাপা হয়- যার শিরোনাম ছিলো- ‘১৬ জন সেনা ও ইপিআর আত্মসমর্পণ করেছে’। এই নিউজটির মাধ্যমেই দৈনিক সংগ্রামের মূর্খতা এবং দালালি স্পষ্ট ধরা পড়ে। ‘জাতীয় ঐক্যের ভিত্তি’ নামে একটি সম্পাদকীয় ছাপা হয়। যেখানে পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতার পক্ষের সংবাদপত্রগুলোর ব্যাপক সমালোচনা করা হয়। যেখানে বলা হয়, ‘পাকিস্তান সৃষ্টির ফলে যে সব পত্রিকা সংবাদ বিক্রি করে দু’পয়সা কামানোর সুযোগ পেয়েছে তাদের উচিত ভারতীয় ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে অন্তত দৈনিক দুটি করে কলাম লেখা’।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন